সোমবার, ৬ মে, ২০১৩

সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়



সাভার ট্র্যাজেডির শিকারে মানুষের লাশের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। শত শত লাশের সারিতে আরও লাশ এখনো সারি বাঁধার অপেক্ষায় আছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই এই লাশের সারি কমানোর কাজে নিয়োজিত অনেকের সাথে যিনি ছিলেন, সেই মহান উদ্ধারকর্মী ইজাজুদ্দিন কায়কোবাদ ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্নালিল্লাহে রাজিউন। শোকে মুহ্যমান জাতিকে আরও শোকার্ত করে দিয়ে নিবেদিত এই প্রাণ আমাদের মাঝে থেকে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আল্লাহই সর্বোচ্চ বিচারক। আশা করছি তার বিচারেও মানবতার তরে জীবন উৎসর্গ করে দেয়া এই বীর বাঙালীকে তিনি বেহেশত নসীব করবেন। আমিন। তাকে প্রাপ্য সম্মান দিতে যদি কেউ কার্পণ্য করে, তাদের আগে থেকেই আমি নিন্দা আর ধিক্কার জানিয়ে রাখলাম।

সাভার ট্র্যাজেডি আমাদের মাঝে অনেকদিন পরে হলেও মানবতাববোধকে কিছুটা জাগিয়ে তুলেছে। অনেকেই যেভাবে পারছেন ট্র্যাজেডি থেকে বেঁচে যাওয়া পঙ্গু বিকলাঙ্গ অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করছেন তাদের পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে। চোখে পানি এসে যাওয়ার মতো অবস্থা। তবে এই পানি আনন্দের। এই পানি সুখের। এই পানি ভালোবাসার। এই পানি মানবতার। এই পানি মনুষ্যত্বের। যারা এই কাজে নিজেদের উজাড় করে বিলিয়ে দিচ্ছেন তাদের সবাইকে আমার স্যালুট।

আলো ব্লগও এই কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে তাদের ভুকিকা রাখছেন। যা আমার ব্লগিংকে প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু কিছুটা মর্মাহতও হয়েছি আমাদের মধ্যে ঐক্যের অভাব দেখে। কেন আমরা একই ব্লগের ব্লগার হওয়া সত্ত্বেও একত্রে মানবতার এই কাজটা করতে পারছি না তা আমার বোধগম্য নয়। আমি জানি যারা এই কাজে নিয়োজিত তাদের সবারই উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। কিন্তু একই কাজ যখন বিচ্ছিন্নভাবে করা হয় আর তা থেকে যতটা সুফল পাওয়া যায়, সেই একই কাজ যদি সম্মিলিতভাবে করা হয় তা থেকে মনে হয় সুফলটা বেশী পাওয়া যায়। এটা আমি বিশ্বাস করি। আপনারা কি করেন সেই প্রশ্নের উত্তর আপনারা দিলেই ভালো হয়। যুগ যুগ ধরে প্রচলিত এবং পরীক্ষিত দুটো প্রবাদ আছে। একটা হল, ‘একতাই বল’। আর অন্যটা হচ্ছে, ‘দশে মিলে করি কাজ হাড়ি জিতি নাহি লাজ’। আমাদের কর্মকাণ্ড এই প্রবাদ দুটোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। ঐক্যের ব্যাপারে কার ভুমিকা অগ্রণ্য ছিল সেই প্রশ্নের উত্তর কষ্ট করে আপনারা দেয়ার চেষ্টা করবেন।

সমুদ্রে পৃষ্ঠে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়ে তা জলোচ্ছ্বাসে পরিণত হয়। কখনো তা সিডর নামে আঘাত হানে, কখনো নীলম নামে আবার কখনো সুনামি হয়ে। অঞ্চলভেদে এর আরও অনেক নাম আছে টাইকুন, হারিকেন ইত্যাদি। উপকূলবর্তী মানুষগুলো তখন খুব অসহায় থাকে। এর এই অসহায় মানুষগুলোর জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব গিয়ে প্রত্যক্ষভাবে বর্তায় ক্ষমতাসীন দলের ওপর যার সাথে প্রথম সারিতে থাকতে হয় আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তরকে। কারণ তারাই জলোচ্ছ্বাসের গতিবিধি পরীক্ষা করে সতর্কবাণী দিয়ে জনগণকে নিরাপদ দূরত্বে রাখার কাজটি করে থাকেন। তাদের যেকোনো ভুল সংকেতে অনেকের জীবননাশ ঘটাতে পারে। মালের হিসাব তখন গৌণ হয়ে পরে। আমাদের এই ব্লগেও সেই রূপ একটা নিম্নচাপ অনুভুত হচ্ছে সাভার ট্র্যাজেডির পর থেকে। কয়জন তা আন্দাজ করতে পেড়েছেন জানি না। তবে আমি পারছি। এই অবস্থায় আমাদের ব্লগের আবহাওয়াবিদরা কি করছেন জানি না। কারণ আমরা যারা ব্লগিং করছি তারা কোন ধরণের সংকেত এখনো পাই নাই। তাই ব্লগিং করেই যাচ্ছি। কিন্তু যদি সত্যি সত্যিই নিম্নচাপটা আঘাত হানে তখন কয়জন ব্লগার এই ব্লগিয় জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে ভেসে যাবেন কে জানে। আমার ব্যাপারটাও জানি না। ঝোপ বুঝে কোপ মারা নাকি উচিৎ। সেই উচিৎ কাজটি আমিও হয়তো করতে পারি। তবে সময়েই বলে দিবে কি করতে যাচ্ছি।

সমুদ্রপৃষ্ঠের নিম্নচাপ নিয়ন্ত্রণে আমাদের কারো হাত নাই। এটা প্রাকৃতিক নিয়মেই পরিচালিত হয়। প্রকৃতি তার নিজস্ব ক্ষমতা দেখিয়ে আমাদের শিক্ষা দিয়ে থাকেন। আশার কথা হচ্ছে আমাদের ব্লগের নিম্নচাপ নিয়ন্ত্রণে আমাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হাত আছে। কারো আছে একেবারে সরাসরি। যেটাকে বলে সুপ্রিম পাওয়ার। এখনো ব্লগের নিম্নচাপটা ইচ্ছা করলে সুপ্রিম পাওয়ার খাটিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব যদি স্বদিচ্ছা থাকে সংশ্লিষ্টদের। বেশী দেরি হলে তা আর সম্ভব হবে না। তাইতো প্রবাদ আছে, সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সেই বিশ্বাসই যদি জানার মাধ্যম হয়
ধর্মবিশ্বাসী তবে শিক্ষিত নয়
যদিও সে বড়ো ডিগ্রীধারী হয়-------