ক্লাস
ওয়ান থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত আমি কঠিন চাপাবাজ ছিলাম।মুখের চাপা ভাঙা
হলেও চাপার জোর মাশআল্লাহ একেবারে ১০০তে ১০০ ছিল।আমার চাপাবাজি প্রতিভায়
মুগ্ধ হয়ে ছোট খালা রীতিমত ঘোষনা করে দিয়েছিলেন আমাদের বাড়ি ‘গোপ্পাগো
বাড়ি’।আমার দাদার বাড়ি চট্রগ্রাম হলেও নানার বাড়ী লক্ষীপুর।লক্ষীপুরের ঐ
দিকে যারা বেশী চাপাবাজি করে তাদের বলে ‘গোপ্পা’।লক্ষীপুরের মানুষ পানিকে
‘হানি’ বললেও গোপ্প মারার ‘গো’ এর পরের অক্ষর ‘প’ কিন্তু ঠিকই উচ্চারন করতে
পারে!ছোটখালার সাথে আমার আবার এমনই খাতির যে আমি কখনো খালা বলে ডেকেছি
কিনা মনে পড়ছেনা।ডাকতাম,মনু।বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই মনুর সাথে আমার
তুই-তোকারীর মধুর সম্পর্ক।খালাকে নাম ধরে তাও আবার তুই-তোকারী করা অনেকে এই
একটা কারণে আমাকে ‘বেদ্দপ’ উপাধী দিলেও আমার কখনো গায়ে লাগেনি।কারণ,মনু
আমাকে নিজ থেকেই শিখিয়েছে তুই-তোকারি করতে।তুই-তোকারির মধ্যে যে আন্তরিকতা
প্রকাশ পায় সেটা আপনিতে নেই কিনা!
চাপাবাজিও যে একটা আর্ট সেটা কেউ না বুঝলেও মনু বুঝতে পেরেছিল বলেই ঘরের সবাই আমার চাপাবাজিতে বিরক্ত হলেও মনু কখনো বিরক্ত হতনা।বরং খুশি হত এই কারণে যে এত সুন্দর করে চাপা মারার প্রতিভা এই দুনিয়ায় কতজনইবা আছে!
ক্লাস ফোরে তখন।চাপাবাজ ভাগিনা পাওয়ার গর্বিতা মনুকে একদিন স্কুল থেকে ফিরে বললাম,মনুরে আজতো বিশাল বড় একটা কাজ করে ফেলছি?মনু হাতের বাটি থেকে ঝালমুড়ি আমার মুখে তুলে দিয়ে বলল,‘আজও কি তোকে পুলিশ ১০০টা চকলেট কিনে দিয়েছে?’
১০০চকলেটের গোপন চাপাবাজির রহস্য হচ্ছে,আগেরদিন স্কুল থেকে ফেরার পর মনুকে বলেছিলাম-মনুরে,স্কুলে থেকে আসার সময় দেখি দুইটা পুলিশ ডিউটি না করে আড্ডা দিচ্ছে।চাকরি রেখে আড্ডা দেওয়ার ছবি তুলে ফেলি।এবং এই ছবি সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে চাকরি নট করার ব্যবস্থা করে দেব বলতেই ওরা রীতিমত আমার হাত ধরে কান্নাকাটি শুরু করে শেষে ১০০টা চকলেট কিনে দেওয়ায় মাফ করে দিয়েছি!মনু চকলেটের ভাগ চাইতেই চঠ করে জানিয়ে দিলাম,চকলেট খেলে দাঁতে পোকা হয় তাই আসার পথে স্কুলের অন্য ছাত্রদের সবগুলো দিয়ে দিয়েছি।
মনুকে বললাম,ধুর!চকলেট না।আজ ৪টা সন্ত্রাসী মেরে স্কুল থেকে ফিরতে যে ব্রিজটা দিয়ে আসতে হয়না সে ব্রিজের নিচে ফেলে দিয়েছি।
মনু হায়,হায় করে চিৎকার করে বলল-আপাগো,তোমার ছেলে সন্ত্রাসী মেরে আসছে!তা ক্যামনে মেরেছিস সন্ত্রাসীগুলোকে।
-স্কুল থেকে বেরিয়ে দেখি গেটের বাইরে যে চাচা চানাচুর বিক্রি করে উনার কাছ থেকে চানাচুর কিনে টাকা না দিয়ে উল্টো অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখাচ্ছে সন্ত্রাসীরা।স্কুল ব্যাগ ছুঁেড় ফেলে সামনে গিয়ে একটার পেটে এক গুসি দিয়ে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে ১গুলিতেই ৪জনকে শেষ করে দিয়েছি।
-এই না হলে আমার ভাইগ্না।১গুলিতে ৪ সন্ত্রাসীকে না মেরে ৪টা গুলি করলে তোর খাওয়া আজ বন্ধ করে দিতাম।তা ৪জনকে ব্রিজের নিচে টেনে আনলি কি করে?’
রহস্যময় হাসি ঠোঁেট ঝুলিয়ে জুতার ফিতা দেখিয়ে বললাম,জুতার ফিতা দিয়ে ৪সন্ত্রাসীর ৪আঙুল একসাথে বেঁধে টেনে এনে ব্রিজের নিচে ফেলে দিয়েছি!
কখনো সন্ত্রাসী মেরে ফেলা,কখনো এলাকার মাস্তানের টাকায় চা খাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি চাপাবাজির প্রতিভায় ঘরের সবাই যে কতটা মুগ্ধ তা টের পেলাম ক্লাস এইটের বার্ষিক পরীক্ষার সময়।অংক পরীক্ষা শেষে বাড়ি না গিয়ে মিষ্টি খেতে ছোট কাকার মিষ্টির দোকানে যেতে বাজারে যেতেই পড়ে গেলাম মারামারিতে।ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের চরম মারামারি থামাতে পুলিশ এসেই শুরু করে দিল লাটিচার্জ।সেদিন আমি আবার স্কুলের ইউনিফর্ম না পড়ে স্টাইল করে টিশার্ট গায়ে দিয়ে গিয়েছিলাম।বয়স অনুপাতে বেশ লম্বা হয়ে যাওয়ায় আমাকে সবাই ভাবত কলেজের ছাত্র।পুলিশ ভাইয়েরা ভাবল যারা মারামারি করছে আমি নিশ্চয় তাদের কোন এক দলের।তাই সামনে পেয়েই পাছায় কয়েক ঘা বসিয়ে দিতেই ‘আম্মু গো,মাইরা ফেললো গো’ বলে চিৎকার দিয়ে দিলাম দৌড়।এক দৌড়ে বাড়ি এসে বিস্তারিত বলতেই আম্মু বিশ্বাসতো করলোই না উল্টো গালে দুইটা চড় বসিয়ে দিলেন।ঘরের সবার একটায় কথা,আমি নিশ্চয় পুলিশের সামনে গিয়ে কোন না কোন চাপাবাজি করেছি।না হয় আমাকে কেন ধোলাই দিবে!সেই দিনের ধোলাইয়ের পর আমার চাপাবাজির ইতি ঘটলেও এখন নিজেই প্রায় চাপাবাজির শিকার হয়।
যার চাপাবাজিতে সবচেয়ে বেশী অতিষ্ট উনি হচ্ছেন,কলিগ রুমা ভাবী।আমার পাশের টেবিলেই উনার টেবিল।কয়েকদিন পর পর উনি বঙ্গবাজার থেকে ১০০০টাকা দামের কাপড় কিনেন আর অফিসে এসে চাপা মারেন ১০হাজার,১৫হাজার টাকা দিয়ে কিনে ইন্ডিয়া থেকে উনার ছোটভাই পাঠিয়েছেন!শুধু কাপড়ই না লিপষ্টিক থেকে শুরু করে চোখের আইলাইনার,নেইলপালিশটা পর্যন্ত উনি চাদঁনী চক থেকে কিনে এনে ঘন্টার পর ঘন্টা চাপার জোরে সিঙ্গাপুরী পন্য বানিয়ে ছাড়েন!উনার দেবর সিঙ্গাপুর থাকেন কিনা!
রুমা ভাবীর চাপাবাজিতে মেয়েলি জিনিসপত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও আমার বড় আপুর দেবর বোরহান ভাইয়ের চাপাবাজি সারাবিশ্ব নিয়ে।উনি সুযোগ পেলেই চাপা মারেন উনার ভাবীর ভাইয়েরা কেউ আমেরিকা ,কেউ সিঙ্গাপুর,কেউ ইংল্যান্ড থাকেন।এইতো গত পরশুর কথা।বোরহান ভাইয়ের সাথে এক বিয়ের অনুষ্টানে গেলাম।উনি আমাকে দেখিয়ে বরের ছোটবোনকে বললেন ‘আমাদের আরিফ ইতালির রোম শহরে থাকে।কয়েকদিন হল দেশে এসেছে।’ মেয়েটি হ্যান্ডশ্যাক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,‘আমিও রোমে আছি।রোমের কোন এলাকায় থাকেন আপনি?’ ভাগ্যিস তখনি মোবাইল বেজে উঠায় জরুরী কলের বাহনা দিয়ে ‘এক্সকিউজ মি’ বলে বিয়ে না খেয়েই পালিয়ে এসেছি!সারাটা দুপুর না খেয়েই থাকতে হয়েছে বোনের গুনধর চাপবাজ দেবরের খপ্পরে পড়ে!
চাপাবাজিও যে একটা আর্ট সেটা কেউ না বুঝলেও মনু বুঝতে পেরেছিল বলেই ঘরের সবাই আমার চাপাবাজিতে বিরক্ত হলেও মনু কখনো বিরক্ত হতনা।বরং খুশি হত এই কারণে যে এত সুন্দর করে চাপা মারার প্রতিভা এই দুনিয়ায় কতজনইবা আছে!
ক্লাস ফোরে তখন।চাপাবাজ ভাগিনা পাওয়ার গর্বিতা মনুকে একদিন স্কুল থেকে ফিরে বললাম,মনুরে আজতো বিশাল বড় একটা কাজ করে ফেলছি?মনু হাতের বাটি থেকে ঝালমুড়ি আমার মুখে তুলে দিয়ে বলল,‘আজও কি তোকে পুলিশ ১০০টা চকলেট কিনে দিয়েছে?’
১০০চকলেটের গোপন চাপাবাজির রহস্য হচ্ছে,আগেরদিন স্কুল থেকে ফেরার পর মনুকে বলেছিলাম-মনুরে,স্কুলে থেকে আসার সময় দেখি দুইটা পুলিশ ডিউটি না করে আড্ডা দিচ্ছে।চাকরি রেখে আড্ডা দেওয়ার ছবি তুলে ফেলি।এবং এই ছবি সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে চাকরি নট করার ব্যবস্থা করে দেব বলতেই ওরা রীতিমত আমার হাত ধরে কান্নাকাটি শুরু করে শেষে ১০০টা চকলেট কিনে দেওয়ায় মাফ করে দিয়েছি!মনু চকলেটের ভাগ চাইতেই চঠ করে জানিয়ে দিলাম,চকলেট খেলে দাঁতে পোকা হয় তাই আসার পথে স্কুলের অন্য ছাত্রদের সবগুলো দিয়ে দিয়েছি।
মনুকে বললাম,ধুর!চকলেট না।আজ ৪টা সন্ত্রাসী মেরে স্কুল থেকে ফিরতে যে ব্রিজটা দিয়ে আসতে হয়না সে ব্রিজের নিচে ফেলে দিয়েছি।
মনু হায়,হায় করে চিৎকার করে বলল-আপাগো,তোমার ছেলে সন্ত্রাসী মেরে আসছে!তা ক্যামনে মেরেছিস সন্ত্রাসীগুলোকে।
-স্কুল থেকে বেরিয়ে দেখি গেটের বাইরে যে চাচা চানাচুর বিক্রি করে উনার কাছ থেকে চানাচুর কিনে টাকা না দিয়ে উল্টো অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখাচ্ছে সন্ত্রাসীরা।স্কুল ব্যাগ ছুঁেড় ফেলে সামনে গিয়ে একটার পেটে এক গুসি দিয়ে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে ১গুলিতেই ৪জনকে শেষ করে দিয়েছি।
-এই না হলে আমার ভাইগ্না।১গুলিতে ৪ সন্ত্রাসীকে না মেরে ৪টা গুলি করলে তোর খাওয়া আজ বন্ধ করে দিতাম।তা ৪জনকে ব্রিজের নিচে টেনে আনলি কি করে?’
রহস্যময় হাসি ঠোঁেট ঝুলিয়ে জুতার ফিতা দেখিয়ে বললাম,জুতার ফিতা দিয়ে ৪সন্ত্রাসীর ৪আঙুল একসাথে বেঁধে টেনে এনে ব্রিজের নিচে ফেলে দিয়েছি!
কখনো সন্ত্রাসী মেরে ফেলা,কখনো এলাকার মাস্তানের টাকায় চা খাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি চাপাবাজির প্রতিভায় ঘরের সবাই যে কতটা মুগ্ধ তা টের পেলাম ক্লাস এইটের বার্ষিক পরীক্ষার সময়।অংক পরীক্ষা শেষে বাড়ি না গিয়ে মিষ্টি খেতে ছোট কাকার মিষ্টির দোকানে যেতে বাজারে যেতেই পড়ে গেলাম মারামারিতে।ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের চরম মারামারি থামাতে পুলিশ এসেই শুরু করে দিল লাটিচার্জ।সেদিন আমি আবার স্কুলের ইউনিফর্ম না পড়ে স্টাইল করে টিশার্ট গায়ে দিয়ে গিয়েছিলাম।বয়স অনুপাতে বেশ লম্বা হয়ে যাওয়ায় আমাকে সবাই ভাবত কলেজের ছাত্র।পুলিশ ভাইয়েরা ভাবল যারা মারামারি করছে আমি নিশ্চয় তাদের কোন এক দলের।তাই সামনে পেয়েই পাছায় কয়েক ঘা বসিয়ে দিতেই ‘আম্মু গো,মাইরা ফেললো গো’ বলে চিৎকার দিয়ে দিলাম দৌড়।এক দৌড়ে বাড়ি এসে বিস্তারিত বলতেই আম্মু বিশ্বাসতো করলোই না উল্টো গালে দুইটা চড় বসিয়ে দিলেন।ঘরের সবার একটায় কথা,আমি নিশ্চয় পুলিশের সামনে গিয়ে কোন না কোন চাপাবাজি করেছি।না হয় আমাকে কেন ধোলাই দিবে!সেই দিনের ধোলাইয়ের পর আমার চাপাবাজির ইতি ঘটলেও এখন নিজেই প্রায় চাপাবাজির শিকার হয়।
যার চাপাবাজিতে সবচেয়ে বেশী অতিষ্ট উনি হচ্ছেন,কলিগ রুমা ভাবী।আমার পাশের টেবিলেই উনার টেবিল।কয়েকদিন পর পর উনি বঙ্গবাজার থেকে ১০০০টাকা দামের কাপড় কিনেন আর অফিসে এসে চাপা মারেন ১০হাজার,১৫হাজার টাকা দিয়ে কিনে ইন্ডিয়া থেকে উনার ছোটভাই পাঠিয়েছেন!শুধু কাপড়ই না লিপষ্টিক থেকে শুরু করে চোখের আইলাইনার,নেইলপালিশটা পর্যন্ত উনি চাদঁনী চক থেকে কিনে এনে ঘন্টার পর ঘন্টা চাপার জোরে সিঙ্গাপুরী পন্য বানিয়ে ছাড়েন!উনার দেবর সিঙ্গাপুর থাকেন কিনা!
রুমা ভাবীর চাপাবাজিতে মেয়েলি জিনিসপত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও আমার বড় আপুর দেবর বোরহান ভাইয়ের চাপাবাজি সারাবিশ্ব নিয়ে।উনি সুযোগ পেলেই চাপা মারেন উনার ভাবীর ভাইয়েরা কেউ আমেরিকা ,কেউ সিঙ্গাপুর,কেউ ইংল্যান্ড থাকেন।এইতো গত পরশুর কথা।বোরহান ভাইয়ের সাথে এক বিয়ের অনুষ্টানে গেলাম।উনি আমাকে দেখিয়ে বরের ছোটবোনকে বললেন ‘আমাদের আরিফ ইতালির রোম শহরে থাকে।কয়েকদিন হল দেশে এসেছে।’ মেয়েটি হ্যান্ডশ্যাক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,‘আমিও রোমে আছি।রোমের কোন এলাকায় থাকেন আপনি?’ ভাগ্যিস তখনি মোবাইল বেজে উঠায় জরুরী কলের বাহনা দিয়ে ‘এক্সকিউজ মি’ বলে বিয়ে না খেয়েই পালিয়ে এসেছি!সারাটা দুপুর না খেয়েই থাকতে হয়েছে বোনের গুনধর চাপবাজ দেবরের খপ্পরে পড়ে!