বৃহস্পতিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১২

বিড়ম্বনা


লোকটা লাইনে আমার সামনেই দাঁড়িয়েছিল। চেহারার মধ্যে একটা রসিকতা ভাবও ছিল। প্রথমে ভাবতেই পারিনি লোকটা এমন কান্ড ঘটাতে পারে। বিপত্তি ঘটতে বেশী সময় লাগল না। লোকটা কাউন্টারে দুইটা টিকিট চাইতেই কাউন্টারের লোকটা বলল ‘‘দুইটা হবে না একটা নিয়া যান’’। খেঁকিয়ে উঠল লোকটা ‘‘কি বললা, আমি কি মিয়া তোমারে টেহা ছাড়া টিকেট দিতে কইছি? ছোট খাটো ঝগড়া শুরু হয়ে গেল। অবশ্য অন্য লোকজন এতে কান দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। কাউন্টারের লোকটাও কম যায় না। যেন ঝগড়া করার জন্য প্রস্তুত হয়েই ছিল। ‘‘আপনেরে দুইটা সিট দিয়া দিলে অন্যরা কী করব?’’ কাউটারের লোকটা চেঁচিয়ে উঠল। সাথে সাথে ফোঁস করে উঠল লোকটা, ''আমার সাথে যে যাইব সে কি আমার কান্দে কইরা যাইব?'' একটু এগিয়ে বললাম ‘‘চাচা, কে যাবে আপনার সাথে?’’ ‘‘তোমার চাচী, ভাতিজা।’’ লোকটা অত্যন্ত সরল ভাবে বলল। কাউন্টারে বললাম ‘‘ভাই টিকেট দুইটা দিয়া দেন, বুড়া মানুষ সাথে মহিলা আছে, শেষ পর্যন্ত লোকটা টিকেট দিয়ে দিল চাচা মিয়া চলে গেলেন। আমি টিকেট নিয়া চলে গেলাম অন্য দিকে। কিছুক্ষন পর ট্রেন আসল। শুরু হয়ে গেল ট্রেনে উঠা যুদ্ধ। যেন দুর্ভিক্ষে খাবারের বস্তা দেওয়া হচ্ছে। যাই হোক, মোটামুটি জীবিত অবস্থায় টেনে উঠলাম। ট্রেনে উঠে দ্বিতীয় যুদ্ধ শুরু হল। ধাক্কাধাক্কির মধ্যে আমাকে আর কষ্ট করে হাঁটতে হল না। এক সময় নিজেকে আবিষ্কার করলাম আমার সিটের সামনে। আপাদমস্তক এক ভদ্রলোক বসে আছেন আমার সিটে। কাউকেই পাত্তা দিচ্ছেন না। কিছু বললাম না। সামনের স্টেশন পর্যন্ত দাঁড়িয়েই থাকতে হল। অবশেষে লোকটা নামল । নড়েচড়ে বেশ আরাম করে বসলাম। একটু পরেই দেখি ঐ বুড়ো চাচা-আর চাচী। চাচী একদম কালো বোরকা পরা। চোখ দুইটা ছাড়া সবই ঢাকা।
-আরে চাচা, কই ছিলেন এতক্ষণ?
-আর কইয়োনা ভাতিজা। ভুল কইরা অন্য বগিতে উঠছিলাম। পরে টিটি এই খানে আইনা দিছে। আমার সিট কোনটা ভাতিজা দেহো তো।
তাদের সিট ছিল একদম আমার সামেন। চাচাকে দেখে আগেই বেশ আলাপ প্রিয় মনে হল। জিজ্ঞেস করলাম, ''কই যাবেন চাচা?'' চাচা হাসি মুখেই উত্তর দিল, '' যামু ঢাকা, বিমান বন্দর। আমার পোলা আইব বিদেশ থেইকা। তারে রিজাব করতে যামু ।'' প্রায় হেসেই ফেলেছিলাম। হাসিটা মুখে চেপে রেখে বললাম, ''চাচা রিজাব না , বলেন রিসিভ ।'' চাচা হাসতে হাসতে বলল, '' হ , রিসিভ আর রিজাভ একই কথা। মাদারসায় পরছি এর ইনজিরি কি আর জানি ।'' এভাবেই পুরো রাস্তায় চাচার সাথে কথা হল। এক সময় বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছলাম। আমি নামলাম । চাচা-চাচিও নামলেন । এখানে হল আর এক বিপত্তি। চাচা ভাবলেন এটাই বিমান বন্দর। আমাকে বললেন “ভাতিজা, বিমানবন্দরে তো কোন বিমান দেখতাছি না আমরা ঠিক জায়গায় নামছি তো ? আমি বললাম, ''এটা হচ্ছে বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন। এখান থেকে বিমানবন্দর আপনাদের সিএনজি করে যেতে হবে ।'' চাচা ব্যাপারটা বুঝলেন কিন্তু তার আপত্তি “নাম বিমানবন্দর দিল কেন? ট্রেনবন্দর দিলে কোন সমস্যা আছিল ?'' আমি বললাম বিমান বন্দর তো কাছেই। এই কারনে হয়তো এই নাম। চাচা শেষ পর্যন্ত আমাকে ঘামিয়ে ছাড়লেন। মনে মনে ভাবলাম, আর বেশী কথা বললেই প্যাঁচাবে কথাকে। তাই বললাম, “চাচা চলেন আপনাদের সিএনজি তে উঠাইয়া দিই ।'' সিএনজি চলে গেল। যাক বাবা বাঁচা গেল। হাত দিয়ে কান দুইটা স্পর্শ করে এর অস্তিত্ব অনুভব করলাম। সিএনজি ওয়ালার কথা ভাবতেই মনে হল, “বেচারা সকালে কার মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠেছিল?