বৃহস্পতিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১২

প্যান্ট কেলেঙ্কারি

অফিস শেষে বাসার গেট দিয়ে ঢুকতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম। বাসার সামনের জায়গায় বিল্ডিংয়ের পিচ্চিদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলায় মগ্ন ভাইয়ার একমাত্র শালি বর্ষা। ব্যাটিংয়ে ভাতিজা রাফাত। কোমরে ওড়না পেঁচিয়ে বোলিং করছে বর্ষা। ওদের পাশ দিয়েই বাসার ভেতরে ঢুকতে গেলে ব্যাটসম্যানের দিকে বল না ছুঁড়ে আমার দিকে ছুঁড়ে মারার সুযোগ ছাড়ার সম্পর্ক আমাদের না।
সুন্দরী বেয়াইনের সঙ্গে বন্ধুরা মোবাইলে, ফেসবুকে ফুসুর ফুসুর করতে ব্যস্ত সেখানে বর্ষার সঙ্গে দা-কুমড়ার সম্পর্ক। যতবারই বেড়াতে এসেছে, ততবারই ওর সঙ্গে ঝগড়া পারিবারিক আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। প্রতিবারই পারিবারিক আদালতের একমাত্র বিচারক আমার মা জননী বর্ষার পক্ষেই রায় দিয়েছেন।
বর্ষার ওভার শেষ হতেই ভেতরে ঢুকেও শেষ রক্ষা হলো না। বল স্টাম্পে মেরে রানআউট করার ভান করে এমনভাবে ছুঁড়েছে পিঠে এসে ঠাস করে লাগল।
আম্মুর কাছে বিচার দিলেও কোনো লাভ হবে না। জননী নিশ্চিত রায় দিবেন ‘ইচ্ছা করে না, বোলিং করতে গিয়ে হাত ফসকে যাওয়ায় বল গায়ে লেগেছে।’
আমাকে যেভাবে বল লাগিয়েছে সেভাবেই ওর পিঠে কইষ্যা বল ছুঁড়ে প্রতিশোধ নিতেই হবে। তাই কিছুই হয়নি এমন ভাব করে খেলায় নেয়ার প্রস্তাব দিতে বাকিরা রাজি হলেও বর্ষা বেঁকে বসল। আমি ব্যাটিং করলে ওর দল হেরে যাবে! টকশো স্টাইলে কাইজ্জ্যাকাটি শেষে ব্যাটিং, বোলিং না শুধু ফিল্ডিং করার শর্তে বর্ষা রাজি হলো।
রাফাতদের দলের ব্যাটিং শেষ। আমরা ফিল্ডিংয়ে নামলাম। তিনতলার এক পিচ্চিকে নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামল বর্ষা। স্ট্রাইকিং প্রান্তে বর্ষা, বোলিংয়ে নিচতলার পিচ্চি কণা। প্রথম কয়েক বল ব্যাপক চেষ্টা করেও লাগাতে পারল না বর্ষা। ৪র্থ বল ব্যাটের সঙ্গে লাগতেই আরেকটা পিচ্চি বলটা ধরতে যাচ্ছে দেখে দিলাম দৌড়। পিচ্চির আগেই বল দখলে নিতে হবে। পরের বলে বর্ষা যদি আউট হয়ে যায়, তাহলে প্রতিশোধ নেয়া হবে না। দৌড়ে গিয়ে উপুড় হয়ে বল তুলতে গিয়ে ‘প্যাআ্য্যত’ করে শব্দ!
কে পরিবেশ নষ্ট করেছে এত জোরে! সন্দেহের দৃষ্টিতে একজন আরেকজনের ওপর দোষ চাপাতে ব্যস্ত। হঠাত্ পাশের ফ্ল্যাটের পিচ্চি তিনা লাফিয়ে উঠে হাততালি দিয়ে বলল, আমরা যা ভাবছি তা না। আরিফ আঙ্কেলের প্যান্ট ছিঁড়ে গেছে। পেছনে হাত দিয়ে দেখি ঘটনা সত্য। তাড়াতাড়ি গায়ের শার্ট খুলে কোমরে পেঁচিয়ে দৌড়।
দোতলার সিঁড়ি বেয়ে উঠে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। একটু পর চারতলা বিল্ডিংয়ের সব পিচ্চিকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে বর্ষা আমার রুমের সামনে এসে মিছিল শুরু করে দিল।
‘প্যান্ট ফাটছে রে প্যান্ট ফাটছে’ বর্ষার বলা শেষ হলেই সব পিচ্চি দলীয় সঙ্গীত গাওয়ার স্বরে চিত্কার ‘আরিফ আঙ্কেলের প্যান্ট ফাটছে প্যাআ্য্যত প্যাআ্য্যত।’
মনে পড়ে গেল ক্লাস এইটের আবুলের কথা। সমাজ বিজ্ঞান ক্লাস চলছিল। প্রতিদিনকার মতো সেদিনও আবুল পড়া শিখে আসেনি। স্যার পড়া জিজ্ঞাসা করতেই বলল, ভুলে গেছি স্যার।
-এ আর নতুন কি। এখন সবার দিকে মুখ করে পাঁচবার কান ধরে উঠবস কর।
-আজকের মতো মাফ করে দেন।
-কেন?
-ভুলে ছোট ভাইয়ের প্যান্ট পরে এসেছি। অনেক টাইট। যদি ছিঁড়া যায়?
-পরনের সময় মন কই ছিল?
-পড়া মনে রাখার ধ্যানে ছিলাম। তয় পরনের সময় কোমর একটু টাইট লাগায় ভাবছি ভাত বেশি খাওয়ায় পেট বড় হয়েছে!
-কোনো বাহানায় আজকে কাজ হবে না। আর একটা কথা বললে ডাবল হয়ে যাবে।
নিরুপায় হয়ে ক্লাসের সবার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আবুল কান ধরল। বেচারার প্যান্ট বেশ টাইট স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। নিশ্চিত দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে দেখে পুরো ক্লাসে পিনপতন নীরবতায় উল্লাসের আগাম প্রস্তুতি। আবুল কান ধরে উঠবস শুরু করল। ১,২ করে চারবার শেষ হওয়ার পরও প্যান্ট ছেঁড়ার কাঙ্ক্ষিত শব্দ না পেয়ে সবাই হতাশ। সবাইকে বিনোদন থেকে বঞ্চিত করতে আরও সতর্কভাবে আবুল ৫ম বার কান ধরে বসতেই ‘প্যাআআ্য্যত’ শব্দ। পুরো ক্লাস উল্লাসে ফেটে পড়ল। মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে চলতে থাকল ইন করা শার্ট বের করে সামনে-পেছনে টেনেটুনে কেলেঙ্কারি ডাকার আবুলের তিড়িবিড়িং প্রচেষ্টা। হৈ-হুল্লায় দিশেহারা হয়ে স্যার ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতেই আবুল এক দৌড়ে টেবিলে গিয়ে বসল।
সামনে না পেছনের দিকে আবুলের ইজ্জতের চাকা পাংচার হয়েছে এ নিয়ে চরম বিতর্ক! শেষে ফলাফল জানতে কোলে স্কুল ব্যাগ চেপে ধরে খিচ্চা বসে থাকা আবুলকে জোর করে উঠানো হলো। হায়! হায় এ কি আবুলের তো প্যান্ট ছিঁড়েনি! তাহলে, শব্দ কিসের হয়েছে!
রহস্যের ইতি টানতে আবুলের পাশে বসে মুখ দিয়ে আবার ‘প্যাআ্য্যত’ করে শব্দ করতেই সবাই বুঝে গেল বাঁদরামিটা আমার। প্যান্ট ছিঁড়ে যাওয়ার শব্দ শোনার ধ্যানে সবাই এতটাই মগ্ন ছিল যে, ফাস্টবেঞ্চে বসা আমি যে মুখ দিয়ে শব্দটা করেছি কেউ টেরই পায়নি।
প্রিয় পাঠক, সেদিন থেকে আবুলের নাম ‘প্যাআ্য্যত আবুল’।রাজনীতির আবুলরা দেশপ্রেমিক হয় কিনা সম্প্রতি আমাদের আবুল ‘প্যাআ্য্যত আবুল’ থেকে ‘প্যাআ্য্যত ’ ডিলেট করে দেশপ্রেমিক যোগ করতে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছে ।কিন্তু আমার নাম তো আবুল না আমার প্যাআ্য্যত কেলেংকারী যাবে কি করে ?